মো. সলিমুল্লাহ সেলিম।।শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় সবুজে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি জনপদে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গড়ে ওঠা গজনী অবকাশ কেন্দ্র ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে জিপ লাইনিং, ঝুলন্ত ব্রিজ ও ক্যাবল কারসহ সম্প্রতি নতুন তিনটি ¯’াপনা উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ রাইডগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
শেরপুরের গজনী অবকাশ আকর্ষণীয় করে তুলতে ‘পর্যটনের আনন্দে তুলসীমালার সুগন্ধে’ স্লোগানকে ধারণ করে শেরপুরকে অনন্য উ”চতায় তুলে ধরতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যা”েছন জেলা প্রশাসক।
শেরপুর জেলা সদর থেকে আনুমানিক ২৮ কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় সীমান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনী শালবনের অব¯’ান। নান্দনিক ও আকর্ষণীয় নানা ¯’াপনা নির্মাণের ফলে গজনী অবকাশ এখন জেলার বৃহৎ পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। প্রতি বছর এই অবকাশ কেন্দ্রটিতে হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমণে আসছেন।
শেরপুর সীমান্তের ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। শীত এলেই দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয় কেন্দ্রটি। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ৯০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে অবকাশ কেন্দ্রটি। কেন্দ্রটি সারাদেশের ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অতি সুপরিচিত। সারি সারি বাহারি গাছগাছালির মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা সড়ক, ছোট-বড় মাঝারি টিলা আর চোখ জুড়ানো সবুজের বিন্যাস প্রকৃতিপ্রেমীদের মন দোলা দিয়ে যায়। প্রবেশপথের পাশেই লেক। লেকের মাঝে চলাচলরত নৌকার ওপর দিয়ে জিপলাইনে মানুষের আনাগোনা। পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যায় এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। রয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত। তার পাশেই বসানো হয়েছে ক্যাবল কার। একসঙ্গে পুরো পরিবার ক্যাবল কারে চড়ে যেতে পারবেন এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। ওয়াকওয়ের পাশে লেকের ধারে তৈরি হ”েছ মিনি কফিশপ। আছে একটি নান্দনিক চিড়িয়াখানা। এটিতে যুক্ত হয়েছে নতুন করে প্রায় চল্লিশ প্রজাতির প্রাণী।
বছরজুড়ে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও শীতকালে ভিড় বাড়ে দর্শনার্থীদের। সবুজের সমারোহ, জিপলাইন, ক্যাবল কার এবং ঝুলন্ত সেতু কেন্দ্রটির আকর্ষণ বাড়িয়েছে অনেকগুণ। এছাড়াও মাশরুম ছাতা বা পাখি আকৃতির বেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধানক্ষেত আর পাহাড়ি জনপদের জীবনযাত্রা উপভোগ্য। এখানে আছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আগত দর্শনার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে জাদুঘরে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস ও ¯ি’রচিত্র। পাশেই রয়েছে আদিবাসী জাদুঘর। বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসীদের জীবনমানের নানা ইতিহাস ও ¯ি’রচিত্র নজর কাড়বে পর্যটকদের। চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কের পাশাপাশি এবার যুক্ত হ”েছ শিশু কর্নার। সঙ্গে আছে শেরপুর জেলা ব্র্যান্ডিং কর্নার। এখানে জেলার বিভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্বলিত ছবি, পুস্তক ও ভিডিও চিত্র সংরক্ষিত থাকবে।
১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসন অবকাশ কেন্দ্রটি নির্মাণ করে। নির্মাণের পর থেকে দূর-দূরান্তের হাজার হাজার মানুষের আগমনের পাশাপাশি ¯’ানীয়দের ভিড় লেগেই থাকে। গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছেÑ দৃষ্টিনন্দন ¯’াপনা, প্রবেশমুখে মৎস্যকন্যা (জলপরী), ডাইনোসরের প্রতিকৃতি, ড্রাগন, দণ্ডায়মান জিরাফ, পদ্মসিঁড়ি, লেকভিউ পেন্টাগন, পাতালপুরী, হাতির প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, গারো মা ভিলেজ আর প্রকৃতিকে মন ভরে দেখার প্রয়াসে রয়েছে সুউ”চ ওয়াচ টাওয়ার। দৃষ্টি যতদূর যায় শুধু সৌন্দর্যের অবগাহন।