ব্রহ্মপুত্রের একটি শাখা নদী ঝিনাই। মেলান্দহের জালালপুরের কাছে জঙ্গলদি এই নদীর উৎসমুখ। ব্রহ্মপুত্র নদীর বিশাল জলরাশি কিন্চিৎ ভাগ হয়ে ঝিনাই নদের নামে প্রবাহিত হতো। এককালে নদীতে প্রচুর ঝিনুকের জন্ম হতো, তা দিয়ে মাছের খাদ্য ও তার খোলশে চুন উৎপাদন এবং মুক্তা আহরনের জন্য বিখ্যাত ছিলো বলে স্থানীয় ভাষায় ঝিনুকের স্থানীয় ভাষায় নদীটির নাম করণ হয় ঝিনাই নদী।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর সূত্র মতে ঝিনাই নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের শেরপুর, জামালপুর এবং টাঙ্গাইল এবং জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৩৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক ঝিনাই নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং ২১।
নদীটি জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা দিয়ে প্রায় প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যমুনায় পড়েছে। বাস্তবতায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনাকে মিলিত করেছে এই ঝিনাই নদী ।
নদীরটি কবে থেকে উৎপত্তি হচ্ছে তার সঠিক ইতিহাস নেই। তবে অষ্টাদশ শতাদ্বীর শেষভাগে যবুনা বা যমুনা নদীর উৎপত্তির পর ব্রহ্মপুত্রের গতি পরিবর্তন হওয়ায় প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র তার বিশালত্ব হারিয়ে ফেলে। এ সময় ব্রহ্মপুত্রের কয়েকটি শাখা সৃষ্টি হয়। ঝিনাই নদী সে সময় উৎপত্তি হয় বলে কারো কারো অভিমত। কারন ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে মি: রেনেল সাহেব বঙ্গদেশের যে মানচিত্র প্রস্তুুত করেন তাতে যমুনা নদী বা ঝিনাই নদীর কোন চিহ্ন দেখাননি। তবে ১৮৫০ সনে সার্ভে নক্সায় যবুনা বা যমুনা নদীর চিহ্ন ও তার পরিমান দেখানো হয়েছে।
জামাপুরের মেলান্দহে ঝিনাই নদীর উৎসমুখ থেকে টাঙ্গাইল জেলা হয়ে এই নদী যমুনায় পড়েছে। বর্তমানে এই নদীর তার সুন্দর্য হারিয়েছে। প্রায় মৃতপ্রায় এই নদী শীর্ণ খালের মতো পরিনিত হয়েছে। দুপাশে নদীর গতিপথ ছোট হতে হতে ফসলের মাঠে পরিনিত হয়েছে।
নদীটিকে বাঁচাতে কোন উদ্দোগ নেই। এখনী এই নদীটিকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। তবেই না একটি স্থানীয় নদী টিকে থাকবে। না হয় ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাবে ঝিনাই নামের নদীটি।।
ছবি: জাহিদুর রহমান উজ্জল