দেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টর তথা পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে দেশের অন্যতম প্রধান এগ্রোবেইজড প্রতিষ্ঠান ফার্মা এণ্ড ফার্ম তথা এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরহুম আবুল কালাম আজাদের অবদান অপরিসীম। তিনি সব সময় চাইতেন এই শিল্পের পাশাপাশি দেশের প্রান্তিক খামারিদের উন্নয়ন হোক। দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও কল্যাণ সাধণে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। মরহুম আবুল কালাম আজাদ এর স্বপ্ন পূরণে ফার্মা এণ্ড ফার্ম কাজ করে যাচ্ছে। যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদিও পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি ততটা ভালো অবস্থানে নেই। করোনার প্রভাবে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই অস্তিত্ব সংকটে। ফার্মা এণ্ড ফার্ম এর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান হাসান আনসারী এসব কথা বলেন।
করোনা পরিস্থিতিতে পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প খুব একটা ভাল অবস্থানে নেই। গত বছরের শেষের দিক থেকেই পোল্ট্রি শিল্প বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাবে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট ফিড উৎপাদনকারী, ভ্যাকসিন আমদানিকারী, ডক উৎপাদনকারী, খামারিসহ প্রত্যেকেই ক্ষতির সম্মুখীনে পড়ছেন।
করোনার কারণে এই শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে প্রভাব ফেলছে। যারফলে ফিডের দাম বেড়ে গেছে। যার দরুন লোকাল প্রোডাকশন খরচও বেড়ে গেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী খামারিরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলেও তিনি জানান
পোল্ট্রি শিল্পের বর্তমান এই পরিস্থিতি থেকে কিভাবে উত্তরণ পাওয়া যাবে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পোল্ট্রি শিল্পের এই ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে দেশের মানুষ খুব একটা স্বস্তিতে নেই । অনেকের চাকুরী চলে গেছে। তাদের পুনরায় চাকুরীর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, পোল্ট্রি উৎপাদিত পণ্যের কনজাম্পশন বাড়াতে হবে। শীত পরবর্তী সময়ে পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থা আরও ভাল অবস্থানে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই সংকটকালীন সময়ে ফার্মা এণ্ড ফার্ম এর ব্যবসায়ে কতটা প্রভাব পড়ছে সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইমরান হাসান আনসারী বলেন, বর্তমান অবস্থার উপর নির্ভর করেই আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। করোনাকালীন এই সময়ে পোল্ট্রি শিল্পের প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে যতটা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কথা ততটা হইনি। দীর্ঘদিন থেকে যারা ফার্মা এণ্ড ফার্ম এর সাথে কাজ করে যাচ্ছে তাদের নিরলস পরিশ্রম ও সহযোগিতার কারণে এখনো আমরা আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।
পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে ফার্মা এণ্ড ফার্ম এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে ফার্মা এণ্ড ফার্ম সীমিত পরিসরে কাজ করলেও ভবিষ্যতে এর পরিধি বাড়ানোর চিন্তা আছে । ভবিষ্যতে পোল্টি ফার্ম, লেয়ার ফার্ম, হ্যাচারী, পোল্ট্রি ফিড, ফিশ ফিড করার চিন্তা আছে। যদিও বর্তমানে একুয়াকালচার নিয়ে কাজ চলছে। পাশাপাশি এনিমেল হেলথ সেক্টর নিয়েও কাজ করছি। ইতোমধ্যে এনিমেল হেলথ প্রোডাক্টের প্রোডাকশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ফার্মা এণ্ড ফার্ম এর সাবেক প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মরহুম আবুল কালাম আজাদ আপাদমস্তক একজন কঠিন পরিশ্রমী,অধ্যাবসায়ী, দুরদর্শী জ্ঞান সম্পন্ন, ন্যায়বাদী ও অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন।
১৯৯৫ সালে তিনি স্বল্প পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরুর দিকে তিনি অনেক সংগ্রাম করেছেন । এই শিল্পের উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। এনিমেল হেলথ সেক্টরের উন্নয়নে এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন (আহকাব) গঠনে তার ভূমিকা অপরিসীম । তিনি আহকাবের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
মরহুম আবুল কালাম আজাদের এই শিল্পের উন্নয়নে আরও বেশ কিছু স্বপ্ন ছিল। যা উনি সম্পন্ন করতে পারেননি। তিনি চাইতেন ফার্মা এণ্ড ফার্ম কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি, প্রাণিসম্পদ ও হিউম্যান হেলথ নিয়ে কাজ করবে। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে ফার্মা এণ্ড ফার্ম তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছে। তার আদর্শকে অনুসরণ ও বুকে ধারণ করেই ফার্মা এণ্ড ফার্ম এর সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।